ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

তবু হামলা অব্যাহত

যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:৪১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১৭, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস

গাজায় টানা ১৫ মাসের সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, এই চুক্তি আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে। তবে চুক্তি ঘোষণার পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক এবং ফিলিস্তিনি ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। প্যালেস্টাইনিয়ান সিভিল ডিফেন্সের মতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে ইসরায়েলি বাহিনী হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে চালানো হামলায় অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছেন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে ইসরায়েল ও হামাস। এর আগে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের হামাস জানায় যে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করেছে।  

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর তার কার্যালয়ে হামাস ও পৃথকভাবে ইসরায়েলি আলোচকদের সঙ্গে বৈঠকের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।

এর আগে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর বলা হয়েছিল, চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগমুহূর্তে হামাস নতুন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে, মিসরের সীমান্ত সংলগ্ন ফিলাডেলফি করিডোরের বিষয়ে হামাসের দাবি সামনে এসেছে। এই আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একজন জ্যেষ্ঠ আরব কূটনীতিক টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর শিগগিরই একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে চুক্তির ঘোষণা দেবে।

এরপর কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানী দোহায় একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন এবং চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মি মুক্তির জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। তারা শিগগিরই মুক্তি পাবে। ধন্যবাদ!

গাজায় হামাস সরকারের মিডিয়া দফতর স্থানীয়দের অনুরোধ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগে কোথাও না যেতে। একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিডিয়া দফতর সম্মানিত নাগরিকদের অনুরোধ জানাচ্ছে যে, তারা যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক শুরুর আগে কোথাও যাবেন না এবং যুদ্ধবিরতির সময় সম্পর্কে তথ্য শুধু আনুষ্ঠানিক সূত্র থেকে সংগ্রহ করবেন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বিবিসিকে জানিয়েছেন, গাজা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে তিনি তার ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন। বুধবার তিনি বলেন, ‘জিম্মি মুক্তি আলোচনা অগ্রগতির কারণে আমি নির্ধারিত কূটনৈতিক সফর সংক্ষেপ করেছি। আগামীকাল হাঙ্গেরিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তবে রাতেই আমি ইসরায়েলে ফিরছি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি যে কোনও মুহূর্তে হতে পারে। চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস গোলাগুলি বন্ধ করবে, জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি শুরু হবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া ছয় সপ্তাহ চলবে। তবে এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে ইসরায়েল গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করে, হামাস ফিরে না আসে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শাসন এবং পুনর্গঠন নিশ্চিত করা যায়। চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

সূত্রের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, কাতার ও মিসর দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন তদারকি করবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পর্যায়ক্রমে গাজার কেন্দ্রীয় নেটজারিম করিডোর থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, হামাস চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজার সীমান্ত থেকে ৭০০ মিটার দূরে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলের ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি জিম্মি হন। এর জেরে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন এবং জনসংখ্যার বড় অংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

আরও পড়ুন