ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

প্রবীণদের প্রতি সদাচরণ

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ২১:০৭, ৮ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ২১:২৬, ৮ অক্টোবর ২০২৪

প্রবীণদের প্রতি সদাচরণ

প্রবীণদের মর্যাদা কত বেশি তা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘোষণা থেকেই প্রমাণিত। তিনি বলেছেন, প্রবীণদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষাকারীরা কেয়ামতের দিন সব ভয়-ভীতি ও বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। প্রবীণদের প্রতি সচাদরণ ও সম্মান জানাতে আরও অনেক ঘোষণা দিয়েছে ইসলাম।

প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দায়দায়িত্ব এবং তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকতে ইসলাম সবসময় গুরুত্ব দিয়েছে। সাধারণত বয়স্ক-প্রবীণ বা বড় ও শ্রদ্ধাভাজনদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনে কেউ কার্পণ্য করে না।
প্রবীণদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা মুসলমানদের রীতি ও ঐতিহ্য। প্রবীণদের প্রতি সম্মানসূচক ব্যবহার সমাজে শৃঙ্খলা ও আদর-শান্তির পরিবেশ বজিয়ে রাখে।

প্রবীণদের শ্রদ্ধা এবং নবীনদের স্নেহ করা হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। হাদিসে রাসুল (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটা মহানবীর শিক্ষা। এক হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সঙ্গে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো। ’ (আবু দাউদ)

পবিত্র কোরআনে (সন্তানদের শিক্ষামূলক) বলা হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ করো। ’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৫)

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। ’ (সুরা লোকমান: ১৪) আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার দায়িত্ব কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। (ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা নং: ২৬০)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২/১২) অন্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সময় মতো নামাজ পড়া। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কোনো কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। (বুখারি, হাদিস নং: ১/৭৬) এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, দ্বীনের অন্যতম স্তম্ভ নামাজের পরে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ হলো পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। অনেকে ধারণা করে থাকে, পিতা-মাতার আনুগত্য ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাদের অত্যন্ত নেককার ও সৎ ব্যক্তি হতে হবে, এমন ধারণা আদৌ ঠিক নয়। এমনকি যদি কারো পিতা-মাতা অমুসলিম হয়, তাহলে তাদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করার জন্য ইসলাম জোর নির্দেশ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ইমাম বুখারি (রহ.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মা অমুসলিম অবস্থায় আমার নিকট আসলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মা আমার নিকট দেখা করতে আসেন, আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করতে পারবো? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ! তার সঙ্গে অবশ্যই সদ্ব্যবহার করো। (বুখারি হাদিস নং: ২/৮৮৪)

ইসলামে পিতা-মাতার খেদমত-সেবা ও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব এতো বেশি যে, জিহাদ বা সংগ্রাম ফরজে কেফায়ার স্তরে থাকা পর্যন্ত পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া সন্তানের জন্য জিহাদে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়।

আরও পড়ুন